মনজু হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার:
উত্তরাঞ্চলের জেলা পঞ্চগড়ে জমি দখল, জালিয়াতি এবং অর্থ আত্মসাৎ চেষ্টার ঘটনায় দুই ব্যাংক কর্মকর্তা এবং এক কলেজ অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বাংলাদেশ সচিবালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মির্জা আব্দুল বাকী মামলা দায়ের করলে ধরা পড়ে প্রতারণার জটিল চক্র।
পঞ্চগড় কোর্ট ইন্সপেক্টর খান মো. শাহরিয়ার শনিবার (১২ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) পঞ্চগড় আদালতে জামিন নিতে এসে ধরা পড়েন আগারগাঁও পরিবেশ ভবন শাখার অগ্রণী ব্যাংকের ম্যানেজার ফিরোজ উদ্দিন ও প্রিন্সিপাল অফিসার শাহবুদ্দিন মাহমুদ। এদের পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয় বিএম কলেজের অধ্যক্ষ দিলদার হোসেন দিলুকে।
ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মির্জা আব্দুল বাকীর জমি দখলের জন্য নানা ষড়যন্ত্র করে আসছিল। এর অংশ হিসেবে ভুয়া দলিল, জাল বায়নামা এবং জাল অ্যাফিডেভিট তৈরি করে তার নামে ব্যাংকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলা হয়।
এই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ২০ লাখ টাকা উত্তোলনের চেষ্টা চালায় চক্রটি। চেকটি প্রথমে পঞ্চগড় সোনালী ব্যাংকে জমা দেওয়া হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করে যোগাযোগ করে মির্জা বাকীর সঙ্গে। তার পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর চেকটি বাতিল করা হয় এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
চেকটি বাতিলের পরও চক্রটি একই চেক নিয়ে বিভিন্ন জেলায় গিয়ে টাকা তুলতে চায়। পরে ভুক্তভোগী আদালতে আনোয়ার হোসেন, জিয়াউর রহমান, জসিম উদ্দিনসহ মোট ৬ জনকে আসামি করে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তে বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডি রাজশাহী, পিবিআই ঠাকুরগাঁও, এবং পঞ্চগড় গোয়েন্দা শাখা সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। তদন্তে উঠে আসে, ফিরোজ উদ্দিন ও শাহবুদ্দিন মাহমুদ চক্রের সদস্যদের সহায়তায় ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছিলেন এবং তা দিয়ে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা চলছিল।
প্রতারণার ঘটনায় আগে থেকেই অধ্যক্ষ দিলদার হোসেন দিলুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) ছিল। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর, বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় ডিএমপির ডিবি পুলিশ তার অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে। পরদিন শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
পঞ্চগড় সদর থানার ওসি (তদন্ত) আশিষ কুমার শীল বলেন, “অধ্যক্ষ দিলুর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে আটক করা হয়েছে এবং আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”
মামলার বাদী মির্জা আব্দুল বাকী বলেন,
“চক্রটি আমার নাম ব্যবহার করে জাল একাউন্ট খুলে টাকা তোলার চেষ্টা করে। আমি বিষয়টি বুঝতে পেরে ব্যাংকে জানাই। এতে বড় ধরনের প্রতারণা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। এখন আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি এবং ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।”
তদন্তে বেরিয়ে আসে, এই চক্রটি শুধু পঞ্চগড়েই সীমাবদ্ধ নয়। ঠাকুরগাঁও, পাবনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এ ধরনের প্রতারণা করে আসছিল তারা। আর এই প্রতারণা কার্যক্রমে সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যাংক কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত ছিলেন।
এই মামলার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, সরকারি বা বেসরকারি পদে থাকা কিছু অসাধু কর্মকর্তা কীভাবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কারণ হতে পারে। জমি দখলের জন্য কাগজ জালিয়াতি, ভুয়া একাউন্ট তৈরি এবং একাধিক জেলায় প্রতারণা চালানো সমাজের জন্য ভয়ানক বার্তা দেয়।
তদন্তে নতুন আসামিদের নাম উঠে আসছে বলে জানিয়েছে পঞ্চগড় জেলা পুলিশের একটি সূত্র। প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আরো গ্রেফতার আসন্ন। এ মামলার অগ্রগতি সারাদেশে এ ধরনের চক্রের বিরুদ্ধে একটি নজির স্থাপন করতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।