মনজু হোসেন
স্টাফ রিপোর্টার
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ফের পুশ-ইনের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। এবার পঞ্চগড় জেলার দুটি পৃথক সীমান্ত দিয়ে ২৪ জন বাংলাদেশিকে—নারী, পুরুষ ও শিশুসহ—জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) গভীর রাতে ও শুক্রবার সকালে। বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের মালকাডাঙ্গা দাড়িয়ার মোড় সীমান্ত ও সদর উপজেলার শিংরোড সীমান্ত দিয়ে এসব বাংলাদেশিদের ঠেলে পাঠায় বিএসএফ।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতের আধারে বোদা সীমান্ত দিয়ে ৬ নারী, ৫ শিশু ও ৬ জন পুরুষসহ মোট ১৭ জন বাংলাদেশিকে পুশ-ইন করে বিএসএফ। স্থানীয়রা সীমান্তবর্তী এলাকায় সন্দেহভাজনভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে তাদের আটক করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বোদা থানায় হস্তান্তর করে।
অপরদিকে, একই সময়ে সদর উপজেলার শিংরোড সীমান্ত দিয়েও বিএসএফ আরও ৭ জনকে—২ নারী, ৩ শিশু ও ২ পুরুষ—বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায়। এদেরও বিজিবি সদস্যরা উদ্ধার করে সদর থানায় সোপর্দ করেছে।
পুলিশ ও বিজিবি সূত্র জানায়, আটককৃত সবাই বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলার খেজুরবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা। তারা বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ভাঙারির কাজ করতেন। চলতি মাসের ৬ জুলাই ভারতীয় পুলিশ তাদের দিল্লি থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বুধবার রাতে তাদের বিমানযোগে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে যাওয়া হয় এবং রাতের অন্ধকারে সীমান্ত এলাকায় এনে জোর করে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হয়।
বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দিন বলেন, “বিজিবি আমাদের কাছে ১৭ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে হস্তান্তর করেছে। আমরা তাদের নাম-ঠিকানা যাচাই করছি। যাচাই-বাছাই শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সদর থানার এক কর্মকর্তাও একই ধরনের তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আটককৃতদের পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক অভিযোগ আনা হচ্ছে না।
এদিকে এ ঘটনার পর স্থানীয়ভাবে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সীমান্ত পুশ-ইনের ঘটনায় কূটনৈতিকভাবে বারবার আপত্তি জানানো হলেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা একের পর এক বাংলাদেশিদের এইভাবে ঠেলে পাঠিয়ে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে চলেছে বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় মানবাধিকারকর্মীরা।
তারা আরও বলেন, বিএসএফ কর্তৃক বারবার বাংলাদেশিদের পুশ-ইন করায় সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়ছে। সরকারের কূটনৈতিকভাবে কঠোর অবস্থান নেওয়া প্রয়োজন।
বিএসএফ কর্তৃক পুশ-ইন হওয়া নারী ও শিশুসহ বাংলাদেশিরা বিজিবির হেফাজতে — পঞ্চগড় সীমান্ত
[নিউজ গ্রামবাংলা]