আশিকুর রহমান, গাজীপুর
দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, অরাজকতা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির প্রতিবাদে গাজীপুরে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে গাজীপুর মহানগর যুবদলের ব্যানারে আয়োজিত এই বিক্ষোভে মহানগরের ৯টি থানা ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
গাজীপুর মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মো. সাজেদুল ইসলাম ও সদস্য সচিব মাহমুদ হাসান রাজুর নেতৃত্বে আয়োজিত এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে হাজারো নেতাকর্মী খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মহানগর দলীয় কার্যালয়ে জড়ো হন। পরে সেখানে একত্রিত হয়ে মিছিলকারীরা শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে।
এই কর্মসূচিতে টঙ্গী পশ্চিম থানা যুবদলের পক্ষে শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। তাদের নেতৃত্ব দেন থানা যুবদলের আহ্বায়ক সদস্য আজিজুর রহমান টিপু। মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ইউনিটের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরা, ওয়ার্ড পর্যায়ের যুবদল নেতা-কর্মীরা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি সদস্যরাও।
বিক্ষোভ শেষে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, “৫ আগস্টের পর থেকে দেশে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের আস্ফালন বেড়েই চলেছে। তারা পরিকল্পিতভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছে, যা আমাদের জাতীয় রাজনীতিকে কলুষিত করছে।”
বক্তারা আরও বলেন, “দেশজুড়ে অজস্র খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, গুম, অপহরণ এবং রাজনৈতিক হয়রানির ঘটনা ঘটছে। অথচ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব ব্যাপারে এক ধরনের নির্লিপ্ততা বজায় রেখেছে। জনগণ আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। প্রশাসন রাজনৈতিক দলের মতো আচরণ করছে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।”
তারা দাবি করেন, দেশে সুশাসনের ঘাটতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রাজনৈতিক ব্যবহার এবং সাধারণ মানুষের কথা বলার অধিকার সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে রাজনীতিতে স্বাভাবিক গতিধারার পরিবর্তে ভয়ভীতির সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।
সমাবেশে বক্তারা সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেন। তারা বলেন, “এই সরকার সম্পূর্ণভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, বরং প্রশাসনের সহায়তায় ক্ষমতায় টিকে আছে। এ কারণেই তারা মানুষের কথা শোনে না, প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে দমন করে।”
তারা আরও বলেন, “সরকারের এই একনায়কতান্ত্রিক আচরণ দেশকে একটি ভয়াবহ দিকের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আজ রাজপথে দাঁড়িয়ে কথা বলা কঠিন হয়ে গেছে, মিছিল করা মানে মামলা খাওয়া। এটি কোনো গণতান্ত্রিক সমাজ নয়।”
সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান এবং জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। তারা সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, “এই আন্দোলন এখন শুধু দলীয় নয়, এটি জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। যদি অবিলম্বে দেশের পরিস্থিতির উন্নয়ন না ঘটে, তাহলে রাজপথেই এর জবাব দেওয়া হবে।”
তারা আরও জানান, সারাদেশে যুবদলের কর্মীরা এখন সংগঠিত হচ্ছে। অন্যায়ের প্রতিবাদে তারা রাজপথে আছে এবং থাকবে। গণতান্ত্রিক অধিকার, ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যুবদল যেকোনো পরিস্থিতিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
বিক্ষোভ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। মহানগরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নেয়, যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মিছিলটি শান্তিপূর্ণ ছিল এবং কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভবিষ্যতে এই ধরনের কর্মসূচি ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্ক নজরদারি অব্যাহত থাকবে বলেও জানানো হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গাজীপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এলাকা। এখানে নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকায় যানজটসহ নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। তবে তারা রাজনৈতিক কর্মসূচি হোক শান্তিপূর্ণ—এটাই চান।
গাজীপুরে যুবদলের এই বিক্ষোভ স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে যে, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরোধী দলের কর্মসূচিগুলো আরও সক্রিয় হচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্নে যুবদলের মতো সংগঠনগুলো যে কোনো মূল্যে রাজপথে থাকতেও প্রস্তুত।
জনগণও আজ আইনশৃঙ্খলা ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার দাবিতে একমত—এমনটাই উঠে এসেছে বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য থেকে। এখন দেখার বিষয়, সরকার কীভাবে এই প্রতিবাদ ও দাবির মুখে সাড়া দেয়।
[নিউজ গ্রামবাংলা]