শাহিন হাওলাদার বরিশাল প্রতিনিধি:
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুমতিবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক ব্যতিক্রমী ও শিক্ষামূলক কর্মশালা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়োজিত এই কর্মশালায় গুরুত্ব পেয়েছে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, মাদক নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাসবিরোধী প্রচার এবং ইভটিজিং নির্মূলের মতো সমাজ ও ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সকালে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করে সুমতিবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন এবং জাতীয় বেসরকারি সংস্থা সেইন্ট বাংলাদেশ।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আফরোজ।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেইন্ট বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর কবির, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তন্ময় হালদার, বাকেরগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার খন্দকার আমিনুল ইসলাম, এবং গারুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম কাইয়ুম খান।
কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। তারা প্রশ্নোত্তর পর্বে সরাসরি অতিথিদের প্রশ্ন করে এবং বিভিন্ন বিষয়ে মতামতও প্রদান করে। এই আয়োজনে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা ও আত্মবিশ্বাসের যে প্রকাশ ঘটেছে, তা আয়োজকদের মধ্যে আশাবাদের সঞ্চার করেছে।
প্রধান অতিথি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, “বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি যা আমাদের আগামী প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “মাদক, সন্ত্রাস ও ইভটিজিংয়ের মতো অপরাধ সমাজে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। এসব প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা ও পারিবারিক নজরদারি জরুরি।”
সেইন্ট বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর কবির বলেন, “এই কর্মশালার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকারের বিষয়ে জানবে এবং কিভাবে সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা যায়, তা উপলব্ধি করবে।”
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার খন্দকার আমিনুল ইসলাম বলেন, “বিদ্যালয় পর্যায়ে এ ধরনের কর্মসূচি আমাদের শিক্ষার্থীদের নৈতিক, সামাজিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক হবে।”
বক্তারা বলেন, বাল্যবিবাহের ফলে মেয়েদের শিক্ষা জীবন বাধাগ্রস্ত হয়, স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে এবং সমাজে অপুষ্টি ও শিশু মৃত্যুর হারও বেড়ে যায়। একইসঙ্গে ইভটিজিং একটি জঘন্য সামাজিক অপরাধ যা শুধু মেয়েদের নয়, পুরো সমাজকে অসুস্থ করে তোলে।
থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ইভটিজিং রোধে শুধু পুলিশ নয়, সমাজের সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের সাহসী হতে হবে এবং অন্যায় হলে প্রতিবাদ করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, শুধু বক্তৃতা নয়, বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই প্রতিরোধ সম্ভব। এজন্য তারা প্রস্তাব করেন—
বিদ্যালয়ে সচেতনতা ক্লাব গঠন
প্রত্যেক ক্লাসে সপ্তাহে অন্তত একবার সচেতনতামূলক আলোচনা
শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে যৌথ সভার আয়োজন
বাল্যবিবাহ রোধে ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে ঘরে ঘরে বার্তা পৌঁছে দেওয়া
ইভটিজিং প্রতিরোধে নির্দিষ্ট অভিযোগ বাক্স স্থাপন
অনুষ্ঠান শেষে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের মতামত তুলে ধরেন। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাহিমা আক্তার বলে, “আমরা আজ বুঝতে পেরেছি, আমাদের চুপ থাকলে চলবে না। অন্যায় হলে প্রতিবাদ করতে হবে।”
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, “ইভটিজিং নিয়ে আগে কথা বলতে ভয় পেতাম, এখন বুঝি এটা বন্ধ করতে সবাইকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে।”
এ ধরনের সচেতনতামূলক কর্মশালা সমাজে দীর্ঘস্থায়ী ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গারুড়িয়ার সুমতিবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এই উদ্যোগ শুধু একটি বিদ্যালয় নয়, পুরো এলাকাকে সচেতন করে তুলবে বলেই মত দিয়েছেন উপস্থিত অতিথিরা।
বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন আয়োজনে আমরা সবসময় পাশে থাকবো। শিশুদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।”
এই কর্মশালার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেমন সচেতন হলো, তেমনি শিক্ষক, অভিভাবক ও সমাজের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে অন্যান্য স্কুলেও এ ধরনের আয়োজন ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আয়োজকদের।
[নিউজ গ্রামবাংলা]