গাজীপুর প্রতিনিধি: আশিকুর রহমান
গাজীপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘টিকটক’-এর জন্য ভিডিও বানাতে গিয়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছেন রাণী বেগম (৩০) নামে এক গৃহিণী। বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে টঙ্গী পূর্ব থানার গাজীপুরা পুকুরপাড় এলাকার ঈদগাহ সংলগ্ন বাসা থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত রাণী বেগমের স্বামী মো. সেলিম হোসেন পেশায় একজন পোশাক শ্রমিক। ঘটনার দিন সকালে তিনি কারখানায় কাজে চলে গেলে বাসায় একা ছিলেন রাণী। একাকিত্বের এই সময়েই নিজের মোবাইল ফোনে ‘টিকটক’ ভিডিও করার পরিকল্পনা করেন তিনি। বিষয়বস্তু ছিল গলায় ফাঁস দেওয়ার একটি নাটকীয় দৃশ্য।
স্থানীয়রা জানান, ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মোবাইল ক্যামেরা চালু রেখে তিনি নিজেই ফাঁসের অভিনয় করছিলেন। তবে হঠাৎ একটি মশা কামড় দেওয়ায় ভয় পেয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এবং পা স্লিপ করে যায়। ফলে গলায় পেঁচানো রশিতে আটকে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।
দুপুর ১টার দিকে স্বামী মো. সেলিম বাসায় ফিরে দরজা বন্ধ পেয়ে সন্দেহ হলে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এসময় তিনি স্ত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেন। পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, এটি একটি দুর্ঘটনাজনিত ‘অপমৃত্যু’। টঙ্গী পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা ঘটনাটিকে অপমৃত্যু হিসেবে তদন্ত করছি। তবে ভিডিও ফুটেজ, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নিহত রাণী বেগমের বাড়ি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলায়। জানা গেছে, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তারা দম্পতি গাজীপুরে এসে পোশাক কারখানায় চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। স্বামী সেলিম হোসেন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় তার কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অল্প সময়েই বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে টিকটকসহ অন্যান্য ভিডিও কনটেন্ট তৈরির সময় নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ভিডিওটি পরীক্ষা করে তারা নিশ্চিত হয়েছেন, এটি পরিকল্পিত আত্মহত্যা নয় বরং দুর্ঘটনাবশত ঘটেছে। স্থানীয়রাও একই মত প্রকাশ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রেন্ড অনুসরণ করতে গিয়ে বাস্তব ও কল্পনার সীমারেখা মুছে ফেলছে অনেক তরুণ-তরুণী ও গৃহবধূরা। এ ধরণের কনটেন্ট তৈরির সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিলে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এ ঘটনায় পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও স্থানীয় প্রশাসন।