আশিকুর রহমান, গাজীপুর :
গাজীপুর মহানগর এলাকার সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই ২০২৫) গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সম্মেলন কক্ষে এই সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের মাননীয় কমিশনার ড. মোঃ নাজমুল করিম খান। সভায় কমিশনার বলেন, “গাজীপুর মহানগরের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে, নিরাপত্তা পরিস্থিতির আরও উন্নতির জন্য শুধুমাত্র পুলিশের একক প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, গোয়েন্দা বিভাগ, সামরিক প্রশাসন ও নাগরিক সমাজের সমন্বিত উদ্যোগ।”
তিনি আরও বলেন, “গাজীপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল এবং জনবহুল এলাকা। এখানে প্রতিদিন লাখো মানুষের চলাচল এবং কাজের সাথে জড়িত বিভিন্ন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেক্ষেত্রে পুলিশের পাশাপাশি সকল নিরাপত্তা সংস্থার সমন্বয় ও তথ্য আদান-প্রদানের কার্যকরী ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার।”
সভায় উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান বিপিএম (সেবা), উপ-পুলিশ কমিশনারবৃন্দ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, ডিজিএফআই (প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা), এনএসআই (জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, আনসার ও ভিডিপি, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার প্রতিনিধিরা।
সভায় গাজীপুর মহানগরের আওতাধীন প্রতিটি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা, ট্রাফিক বিভাগের সদস্যসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভায় প্রত্যেক থানার ওসি তাদের এলাকায় বিদ্যমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জ এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
১. শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ এবং নিরাপত্তা:
গাজীপুরে অবস্থিত শতাধিক গার্মেন্টস ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লাখো শ্রমিকের নিরাপত্তা, শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণ, ধর্মঘট প্রতিরোধ ও শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
২. মাদক, জুয়া ও কিশোর গ্যাং দমনে কার্যকর পদক্ষেপ:
সভায় গাজীপুর মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে থাকা মাদক চক্র, জুয়া, ও কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করার তাগিদ দেওয়া হয়।
৩. সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধ:
শিল্প এলাকা ও আবাসিক এলাকায় চাঁদাবাজ চক্র ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৪. ডিজিটাল নিরাপত্তা ও প্রযুক্তির ব্যবহার:
সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার, থানাভিত্তিক তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধকরণ এবং ডিজিটাল নজরদারির বিষয়েও আলোচনা হয়। প্রযুক্তির সহায়তায় অপরাধ দ্রুত শনাক্তকরণ ও প্রতিরোধের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
৫. ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও যানজট নিরসন:
গাজীপুর মহানগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ট্রাফিক জ্যাম এবং যানবাহনের বিশৃঙ্খলা নিরসনের জন্য ট্রাফিক বিভাগকে আরও দক্ষ ও প্রযুক্তিনির্ভর করার কথা বলা হয়।
সভায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা তাদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ তুলে ধরেন। ডিজিএফআই ও এনএসআই প্রতিনিধিরা বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের উপর কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে এবং তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে পুলিশকে সহযোগিতা করা হবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি বলেন, “যেকোনো সংকটে সেনাবাহিনী সবসময় দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে পাশে রয়েছে এবং গাজীপুর মহানগরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে প্রয়োজনে যৌথ অভিযান পরিচালনায় প্রস্তুত।”
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও অন্যান্য সরকারি সংস্থা তাদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য স্থানীয় থানা পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান সভা শেষে বলেন, “নগরবাসীর জানমাল রক্ষা, শিল্পাঞ্চলে শান্তি বজায় রাখা এবং অপরাধমুক্ত সমাজ গড়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। সকল নিরাপত্তা সংস্থার সমন্বয়ে কাজ করলেই আমরা একটি নিরাপদ গাজীপুর মহানগর গড়ে তুলতে পারব।”
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি থানা পুলিশ সদস্যদেরকে আরও জনবান্ধব হতে হবে, জনগণের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে শুনতে হবে এবং দ্রুত আইনগত সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করার আহ্বান জানান।
মতবিনিময় সভাটি গাজীপুর মহানগরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সভার মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে তথ্য বিনিময় ও সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হলো। আশা করা হচ্ছে, এর ফলে গাজীপুর মহানগরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও দৃঢ় হবে এবং নগরবাসী আরও নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক পরিবেশে বসবাস করতে পারবে।