মুহাম্মদ আবু হেলাল, শেরপুর প্রতিনিধি:
শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলায় মৎস্য প্রকল্পে সেচ পাম্পের বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে শহিজল হক (৭০) নামে এক প্রবীণ কৃষকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (৪ মে) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার সিংগবরুণা ইউনিয়নের মাধবপুর-মুরগাচুরা গ্রামে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত শহিজল হক ঐ গ্রামের মৃত হাজী অছিমদ্দিনের ছেলে।
স্থানীয় সূত্র ও নিহতের পরিবার জানায়, শহিজল হক প্রতিদিনের মতো ওই সকালে মাঠে কাজ করতে যান। কাজের অংশ হিসেবে তিনি স্থানীয় এক মৎস্য প্রকল্পের পাড়ে ঘাস কাটছিলেন। সেই প্রকল্পটি উকিল মিয়া নামে একজনের মালিকানাধীন। পাড়ে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে সংযুক্ত একটি জিআই তারে অসাবধানতাবশত জড়িয়ে যান তিনি। সাথে সাথে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন এই বৃদ্ধ কৃষক।
শহিজল হকের মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রতিবেশী ও স্বজনরা জানান, শহিজল হক ছিলেন একজন সহজ-সরল এবং পরিশ্রমী কৃষক। তার এমন আকস্মিক মৃত্যুতে পুরো পরিবার ও এলাকাবাসী শোকাহত।
ঘটনার খবর পেয়ে শ্রীবরদী থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরবর্তীতে নিহতের ছেলে সওদাগর হক বাদী হয়ে থানায় একটি ইউডি (Unnatural Death) মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে শ্রীবরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার জাহিদ বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক তারে অসাবধানতাবশত জড়িয়ে গিয়ে শহিজল হকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা গ্রহণ করা হয়েছে এবং যথাযথ তদন্ত চলছে।”
প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলে থাকা বৈদ্যুতিক তারে কিছু অংশে আবরণ ছিল না, এবং সেটা সেচ পাম্পের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। যদিও প্রকল্পের মালিক উকিল মিয়া দাবি করেছেন, “ঠিক কীভাবে তারটি বিদ্যুতায়িত হয়েছিল, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই।” তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রকল্পে বিদ্যুতের সংযোগে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না, যা এই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হতে পারে।
নিরাপত্তাব্যবস্থা ও অসচেতনতার কারণে প্রাণ হারানো এই কৃষকের মৃত্যু নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভও তৈরি হয়েছে। তারা বলেন, “প্রজেক্টে যদি সঠিকভাবে বৈদ্যুতিক সংযোগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকত, তাহলে হয়তো শহিজল হক আজ বেঁচে থাকতেন।”
এলাকাবাসী প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন, সকল বৈধ ও অবৈধ মৎস্য প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ম মেনে দেওয়া হচ্ছে কি না তা তদন্ত করা হোক। একইসঙ্গে, যেসব স্থানে জনগণের যাতায়াত রয়েছে, সেখানে যেন যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
এদিকে নিহত শহিজল হকের দাফনকার্য তার পারিবারিক কবরস্থানে সম্পন্ন হয়েছে। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সামাজিক সংগঠনগুলো। তারা ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত ও ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
শ্রীবরদী থানা পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে এবং প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।