শেখ খায়রুল ইসলাম, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি:
প্রায় তিন দশকের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পেল খুলনার পাইকগাছার আলোচিত নাছিরপুর খাল। তালতলা থেকে হরিঢালী পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার বিস্তৃত খালটি গতকাল বুধবার (২ জুলাই) উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধার ও উন্মুক্ত করা হয়। এতে ২০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা।
খাল উন্মুক্ত করার সময় উপস্থিত ছিলেন এসিল্যান্ড, সেনাবাহিনী ও পুলিশ কর্মকর্তারা। হাজার হাজার নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে খাল থেকে অবৈধ বাঁধ, জাল ও প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ফেলা হয়। প্রায় ২০৫ বিঘা জায়গাজুড়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়—এই খাল এখন সকলের জন্য উন্মুক্ত।
স্থানীয়রা জানান, এই খাল ছিল তাদের জীবিকা, পানির উৎস, মাছ চাষের ভরসা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিছু প্রভাবশালী খাল দখল করে জনগণকে বঞ্চিত করে আসছিল। বাঁশের পাটা, জালের ঘেরা দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অনেকের ফসলের ক্ষতি, ঘেরের ধ্বংস এমনকি শারীরিক নিপীড়নও সইতে হয়েছে সাধারণ মানুষের।
স্থানীয়রা আরও বলেন, বহু বছর ধরে এই খাল উন্মুক্ত করার দাবিতে হয়েছে মানববন্ধন, মিছিল, সংবাদ সম্মেলন। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। অবশেষে ৩০ জুন খুলনা জেলা ভূমি মন্ত্রণালয়ের জলমহাল সংক্রান্ত কমিটির সভায় খাল উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়। এতে নেপথ্য ভূমিকা রেখেছেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট সাংবাদিক আনোয়ার আলদীন।
খালটি উন্মুক্ত হওয়ার পর বুধবার দিনটি পরিণত হয় এক মহোৎসবে। গোয়ালবাথান, প্রতাপকাঠি, খোলা, রেজাকপুর, হরিঢালী, কপিলমুনি, তালতলা, কানাইডাঙ্গা, কাশিমনগরসহ আশপাশের ২০টি গ্রামে ছিল আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ আর প্রাণের উল্লাস। শিশু-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাই নেমে পড়েন খালে মাছ ধরতে। যেন এক মুক্তির উৎসব!
খুলনা জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলামের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাস্তবায়িত এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান—আজ তারা তাদের ‘জীয়নকাঠি’ ফিরে পেয়েছেন।