আশিকুর রহমান, গাজীপুর:
গাজীপুরের টঙ্গীতে একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনায় আতঙ্কিত জনসাধারণ এবার সরব হয়ে উঠেছেন। ফ্লাইওভার এলাকায় ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত মাহফুজুর রহমানের হত্যার প্রতিবাদে ও ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
শুক্রবার (১১ জুলাই) সকাল ১০টায় টঙ্গী কলেজ গেট এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। আন্দোলনকারীরা হাতে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মহাসড়কের পাশে মানববন্ধন করেন এবং পরে মিছিল নিয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার সামনে অবস্থান নেন।
এ সময় তারা থানা চত্বরে ঢুকে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, “ফ্লাইওভার এলাকায় প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। রাতে তো বটেই, দিনে দুপুরেও মানুষ নিরাপদ নয়। অথচ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর তৎপরতা দেখা যায় না।”
তারা আরও বলেন, টঙ্গীর ফ্লাইওভারটি এখন ছিনতাইকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। পুরোপুরি কাজ শেষ না করেই ফ্লাইওভারটি খুলে দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ স্থানে নেই পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা, সিসিটিভি ক্যামেরা বা পুলিশ বুথ। ফলে সাধারণ পথচারী, শিক্ষার্থী ও যাত্রীরা প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন।
আন্দোলনকারীদের দাবি ও ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, ফ্লাইওভার ও আশপাশের এলাকায় নিয়মিত টহল বাড়ানো হবে, স্থায়ী পুলিশ বক্স স্থাপন ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। পুলিশের এমন আশ্বাসে আন্দোলনকারীরা শান্ত হন এবং আপাতত কর্মসূচি স্থগিত করেন।
এ বিষয়ে এক আন্দোলনকারী বলেন, “আমরা প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখতে চাই, কিন্তু সেই আস্থা বারবার ভঙ্গ হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা রাস্তায় নেমেছি। এবার যদি কার্যকর পদক্ষেপ না হয়, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”
এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ছিনতাইরোধে বাড়তি নজরদারি শুরু হয়েছে এবং পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ।
এলাকাবাসী ও সচেতন নাগরিকরা মনে করছেন, এই ফ্লাইওভার ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের অরাজকতা ও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তারা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে নিরাপত্তা অবকাঠামো গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন।
এই আন্দোলন শুধু ছিনতাই প্রতিরোধ নয়, নাগরিক নিরাপত্তার অধিকারের প্রতীক হিসেবে প্রতিফলিত হয়েছে—এমনটাই মত বিশ্লেষকদের।