মুহাম্মদ আবু হেলাল, শেরপুর:
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার তাওয়াকুচা টিলাপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা থেকে ২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৪ জন শিক্ষার্থীর সবাই ফেল করেছে। এই ফলাফল নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে।
উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের অন্তর্গত এই মাদরাসাটি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এতে ১৪ জন শিক্ষক ও ৩ জন স্টাফ কর্মরত আছেন। অথচ এত শিক্ষক-কর্মচারী থাকার পরও মাত্র ৪ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে এবং কেউই উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
শেরপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় দাখিল পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৪৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ১০৫টি দাখিল মাদরাসার মধ্যে একমাত্র এই প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাশ করতে পারেনি। জেলার মোট ৩ হাজার ৩৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৫১৩ জন উত্তীর্ণ হয়েছে এবং ২৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, এই মাদরাসার শিক্ষার মান নিয়ে আগে থেকেই প্রশ্ন ছিল। কাংশা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রহমত আলী বলেন, “আমার বাড়ির পাশেই এই মাদরাসা। এখানে তেমন কোনো শিক্ষাদান হয় না। কিছুদিন আগে শুনেছি এখানে নতুন ভবন হবে। ভবন দিয়ে কি হবে, যদি পাঠদানই না হয়?”
ফলাফল বিপর্যয়ের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে মাদরাসার সুপার মো. মোতালেব বলেন, “আমি জানি না কেন এমন ফল হয়েছে।” গত বছরের ফলাফল ও শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি প্রথমে এড়িয়ে যান এবং পরে ফোন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অবস্থা আরও জটিল হয় যখন দেখা যায়, এতজন শিক্ষক থাকার পরও পাঠদানের কার্যক্রম ছিল না বললেই চলে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
মাদরাসাটির এডহক কমিটির সভাপতি এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, “সরকারি নির্দেশনায় উপজেলায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে আমার দায়িত্ব রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না হওয়ায় নিয়মিত ক্লাস হয় না। তবে এখন থেকে এই মাদরাসা আমি নিজে মনিটরিং করব এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসারকেও নিয়মিত খোঁজ রাখতে নির্দেশ দিয়েছি।”
স্থানীয় অভিভাবকদের দাবি, এই ধরনের ফলাফল শুধু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নষ্ট করছে না, পুরো এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা তৈরি করছে। তারা দ্রুত মাদরাসাটির শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক নজরদারির দাবি জানান।
সারসংক্ষেপ:
ঝিনাইগাতীর তাওয়াকুচা টিলাপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা থেকে এবার কোনো শিক্ষার্থী পাশ করতে না পারায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও শিক্ষার মানোন্নয়নের দাবি উঠেছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে।