আমিরুল ইসলাম, শেরপুর প্রতিনিধি :
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেও উচ্চ শিক্ষার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দুই মেধাবী শিক্ষার্থীর। পরিবারিক দারিদ্র্যতার কারণে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন অভিভাবকরা। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় পলাশীকুড়া জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজু আহাম্মেদ ও নাইম খান দারুণ ফলাফল করলেও তাদের স্বপ্ন থমকে যেতে বসেছে শুধুমাত্র অর্থাভাবে।
সরকারি ফলাফল ঘোষণার দিন বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, রাজু আহাম্মেদ সকল বিষয়ে ‘এ প্লাস’ পেয়ে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। অন্যদিকে, নাইম খান দুটি বিষয়ে ‘এ’ এবং বাকিগুলোতে ‘এ প্লাস’ পেয়ে জিপিএ-৫ পায়। দুইজনই বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশের সেবা করার স্বপ্ন দেখছে।
কিন্তু এই সাফল্যের পেছনে ছিল তাদের পরিবারের সীমাহীন ত্যাগ ও কষ্ট। রাজুর বাবা সুলতান মিয়া এবং নাইমের বাবা রুপচাঁন মিয়া — দু’জনই অটোরিকশা চালক। তাদের আয় খুবই সীমিত। এ আয়ে সংসার চালানোই যেখানে কষ্টসাধ্য, সেখানে কলেজে ভর্তি, বই, কোচিং, ইউনিফর্ম ও অন্যান্য খরচ সামলানো তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব।
রাজু জানায়, “আমি ডাক্তার হতে চাই। মানুষের সেবা করতে চাই। কিন্তু জানি না পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারব কি না। বাবা অটোরিকশা চালিয়ে যা আয় করেন, তাতে সংসারই চলে না, পড়ালেখার খরচ তো দূরের কথা।”
নাইম বলে, “আমি ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চাই। কিন্তু কলেজে ভর্তি, টিউশনের ফি, নতুন বই সবকিছুতেই টাকা লাগে। আমাদের সেই সামর্থ্য নেই।”
রাজুর বাবা সুলতান মিয়া বলেন, “আমার ছেলে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। তার এই সাফল্যে আমি খুশি হলেও খুব দুশ্চিন্তায় আছি। উচ্চ মাধ্যমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত অনেক টাকা লাগে। আমি জানি না, অটো চালিয়ে সেই খরচ চালাতে পারব কি না।”
নাইমের বাবা রুপচাঁন মিয়াও বলেন, “ছেলে আমার গর্ব। কিন্তু গরিবের ঘরে জন্ম বলে সে যদি লেখাপড়া বন্ধ করে দেয়, তাহলে কষ্ট হবে সারাজীবন। সরকারি বা কোনো দানশীল ব্যক্তি যদি পাশে দাঁড়াতেন, তাহলে হয়তো ছেলের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে পারতাম।”
এ বিষয়ে পলাশীকুড়া জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নেছার উদ্দিন বলেন, “ছেলেদুটো অত্যন্ত মেধাবী। তারা সরকারি বা বেসরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির সম্পদ হতে পারবে। আমি সকলের প্রতি অনুরোধ জানাই, যেন তারা পাশে দাঁড়ায়।”
দুই মেধাবী ছাত্রের এই অবস্থায় এলাকাবাসী ও স্কুল কর্তৃপক্ষও আশা করছেন, সরকার বা সমাজের সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা এগিয়ে এসে এই শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করবেন। তা না হলে দেশের সম্ভাবনাময় দুটি মেধা ঝরে পড়তে পারে।