মনিরুজ্জামান লিমন, বকশীগঞ্জ (জামালপুর):
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার দশানী নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ফেরাতে চর আইরমারী ও খাপড়া পাড়া এলাকায় স্থানীয়ভাবে নির্মিত দুটি বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে। শুক্রবার (২ মে) বিকেলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতিতে এই বাঁধগুলো ভেঙে ফেলা হয়। এতে স্বস্তি ফিরে এসেছে নদীর উজানের অন্তত ২০টি গ্রামের শত শত কৃষকের মাঝে।
নদীর পানি আটকে পড়ায় উজানের ফসলি জমিতে পানির জমে থাকা, আধাপাকা ধান পচে যাওয়ার আশঙ্কায় কৃষকদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বাঁধ অপসারণের ফলে এসব জমির পানি সরে গিয়ে ধান ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বকশীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী দেওয়ানগঞ্জের চর আইরমারী ও খাপড়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দারা নিজেরাই নদীর দুই পাশে বাঁধ নির্মাণ করেছিলেন। তাদের দাবি ছিল, এই বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে নদী ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হবে। তবে এর ফলে নদীর স্বাভাবিক স্রোতপথ বন্ধ হয়ে যায় এবং উজানের বিস্তীর্ণ জমিতে পানি জমে গিয়ে ফসল বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দেয়।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকরা বাঁধ সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ মে প্রশাসনের একটি দল যৌথ অভিযান চালায়। কিন্তু বাঁধ অপসারণ করতে গিয়ে প্রতিরোধের মুখে পড়ে প্রশাসন। সে সময় ঘটনাস্থলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দুইজনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
পরদিন স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতায় বসে আলোচনা সভা। দীর্ঘ আলোচনার পর অবশেষে বাঁধ নির্মাণকারী এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে বাঁধ সরিয়ে নিতে সম্মত হন। শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলে বাঁধ অপসারণের কাজ। অবশেষে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।
নদীর পানিপ্রবাহ পুনরুদ্ধার হওয়ায় উজানের চরাঞ্চলের কৃষকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। অনেকে জানান, দেরিতে হলেও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এবং স্থানীয় নেতৃত্বের সমঝোতায় বড় ধরনের ফসলের ক্ষতি থেকে তারা রক্ষা পেয়েছেন।
এ বিষয়ে বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা বলেন, “দশানী নদীর ওপর দুটি বাঁধ স্থানীয়ভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। এতে উজানের একাধিক গ্রামের কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে যায়। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখেছি এবং আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান হয়েছে। বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে। এখন নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরেছে।”
তিনি আরও জানান, “দীর্ঘমেয়াদে নদীভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে টেকসই ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।”
অন্যদিকে, নদীপারের খাপড়া পাড়া ও চর আইরমারীর কিছু বাসিন্দা বাঁধ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, তারা নিজেদের ঘরবাড়ি রক্ষার জন্যই বাঁধ নির্মাণ করেছিলেন। এখন নদীর স্রোতে ভাঙনের আশঙ্কা বেড়েছে।
তবে প্রশাসন জানিয়েছে, নদীভাঙন রোধে সবপক্ষের কথা বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খোঁজা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেওয়া হবে।
এই ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে নদী ব্যবস্থাপনার জটিলতা ও সমন্বয়ের ঘাটতি প্রকাশ করেছে, যা ভবিষ্যতে উন্নয়ন পরিকল্পনায় গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে।