আবুল হাশেম
রাজশাহী ব্যুরোঃ
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী জেলা রাজশাহী শুধু শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসেই নয়, আমের জন্যও দেশ-বিদেশে পরিচিত। এখানকার উর্বর মাটি ও অনুকূল জলবায়ু আম চাষের জন্য একেবারেই উপযোগী। এই মৌসুমী ফলকে ঘিরেই রাজশাহীর মানুষের জীবিকা, সংস্কৃতি ও গর্ব গড়ে উঠেছে—যা নিঃসন্দেহে এক প্রাকৃতিক আশীর্বাদ।
রাজশাহীর মধ্যে বাঘা উপজেলা আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। পদ্মা নদীর তীরবর্তী এই উপজেলা প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন বাঘা মসজিদের জন্য যেমন বিখ্যাত, তেমনি আমের জন্যও সুপরিচিত। বাঘার আমের খ্যাতি এতটাই বিস্তৃত যে, ঐতিহাসিক মসজিদের ফটকেও আমের নকশা খোদাই করে রাখা হয়েছে। এটি বাঘাবাসীর আত্মপরিচয় এবং আমের সঙ্গে তাদের আত্মিক সম্পর্কের দৃশ্যমান প্রতীক।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, “বাঘার আম আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর পরিচয়ের অংশ। তাই মসজিদের মতো পবিত্র স্থানের সঙ্গে এই ফলের ছবি যুক্ত করা হয়েছে গর্বের প্রতীক হিসেবেই।”
প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয় গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, আম্রপালি প্রভৃতি আমের জাত। মৌসুমজুড়ে বাঘার হাজারো চাষি ব্যস্ত থাকেন পরিচর্যা, সংগ্রহ ও বিপণনে।
কৃষি বিভাগ জানায়, এ বছর বাঘা উপজেলা থেকে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। আমচাষ ও বিপণন কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
এক প্রবীণ আমচাষি হাফিজ উদ্দিন বলেন, “আম আমাদের জীবনের রুটি-রুজি। আমরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছি। বাঘার নাম এখন সারা দেশেই নয়, বিদেশেও পরিচিত হয়েছে আমের জন্য।”
বর্তমানে বাঘার আম শুধু দেশের বাজারেই নয়, পৌঁছে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপেও। এতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের আত্মপরিচয় ও সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবেও ভূমিকা রাখছে এই ফল।
একজন আমচাষি বলেন, “আম আমাদের জীবনের অংশ। এই আম চাষেই চলে পরিবারের খরচ, সন্তানের পড়ালেখা আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন।”
সব মিলিয়ে বলা যায়, বাঘার মানুষের কাছে আম শুধু মৌসুমী ফল নয়—এটি তাদের গর্ব, জীবিকা এবং এক প্রকৃতি-প্রদত্ত অমূল্য আশীর্বাদ।