নিজস্ব প্রতিবেদক:
শেরপুর সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের মুন্সীরচর পূর্বপাড়া গ্রামে একটি মেহগনি গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় মো. ফজলুল হক (৪৫) নামে এক কৃষকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার (৪ মে) সকালে বাড়ির পাশে গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি দেখতে পান এলাকাবাসী। নিহত ফজলুল হক ওই গ্রামের মৃত সমেশ উদ্দিনের ছেলে।
এলাকাবাসী জানায়, ফজলুল হক ৩ মে রাতে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। পরিবারের লোকজন ভেবেছিল তিনি কোথাও আত্মীয়ের বাড়ি বা বাজারে রাত কাটিয়েছেন। কিন্তু সকালে বাড়ির পাশে মেহগনি গাছের ডালে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় তার মরদেহ ঝুলে থাকতে দেখা যায়। দৃশ্যটি দেখে আতঙ্কিত স্থানীয়রা দ্রুত থানায় খবর দেয়।
খবর পেয়ে শেরপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জুবায়দুল আলম এবং এসআই নজরুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্সসহ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহটি উদ্ধার করেন। পরে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
ঘটনার পরপরই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই প্রথমে এটিকে আত্মহত্যা মনে করলেও, পরবর্তীতে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে হত্যার আলামত মিলেছে বলে জানা গেছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আব্দুল করিম সাংবাদিকদের জানান, নিহতের শরীরে একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, “নিহতের তলপেটে, হাঁটুতে এবং পুরুষাঙ্গে স্পষ্ট জখমের চিহ্ন রয়েছে। এগুলো দেখে আত্মহত্যার বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে বলে আমরা মনে করছি। ইতোমধ্যে একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।”
স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছেন, নিহত ফজলুল হক একজন নিরীহ কৃষক ছিলেন। কারও সঙ্গে তেমন বিরোধ ছিল না বলেও তারা দাবি করেন। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, কিছুদিন আগে তার সঙ্গে পারিবারিক ও সম্পত্তিগত বিরোধ নিয়ে স্থানীয়ভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছে।
শেরপুর সদর থানার ওসি জুবায়দুল আলম বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে এটি হত্যাকাণ্ড বলেই আমরা ধারণা করছি।”
তিনি আরও জানান, “মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পরিবারের পক্ষ থেকেও হত্যার সন্দেহে মামলা দায়েরের কথা বলা হয়েছে।”
এদিকে, ফজলুল হকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার স্ত্রী, সন্তান এবং আত্মীয়স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। এলাকাবাসী এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তের স্বার্থে প্রাথমিকভাবে কাউকে আটক না করা হলেও, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে এবং খুব শিগগিরই দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এই ঘটনায় আবারও সামনে চলে এসেছে গ্রামীণ এলাকায় নিরাপত্তা ও বিচার ব্যবস্থার গুরুত্ব। স্থানীয়দের দাবি, অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় না আনলে এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে।